রংপুর কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী এক আদিবাসী ছাত্রীকে চলন্ত অটোরিকশায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে শালবনে ফেলে দেয় দুই দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় তরুণীর প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমিক ও তার এক সহযোগী হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
নিহত রুখিয়া রাউতের বাড়ি রংপুর জেলার বদরগঞ্জের খোর্দ্দ বাগবাড় গ্রামে। তার বাবা দিনমজুর দিনেশ রাউত। সাহায্য হিসেবে পাওয়া জায়গায় একটি ছোট্ট ঝুপড়িঘরে তাদের বসবাস। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রুখিয়ার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষে চাকরি করে বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচানো। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। সোমবার তাকে হত্যা করা হয়।
রুখিয়াকে হারিয়ে তার মা সুমতি রাউত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। শোকের ছায়া নেমে এসেছে আদিবাসী পল্লিতে। মঙ্গলবার সকালে পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাঁচপুকুর শালবন থেকে অজ্ঞাত হিসেবে রুখিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পার্বতীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে গতকাল বুধবার ভোরে পার্বতীপুর মডেল থানা পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো খোর্দ্দ বাগবাড় গ্রামের আনিছুল হক, অটোচালক রাজ খান এবং দুর্গাপুর নতুন বাজার গ্রামের আশিকুজ্জামান। তাদের ৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন রুখিয়া বাড়িতেই ছিলেন। পার্শ্ববর্তী গ্রামের সবজি বিক্রেতা আনিছুল হকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আনিছুল দুই মাস আগে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। সোমবার সন্ধ্যায় আনিছুল রুখিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে অটোরিকশায় করে ঘুরতে বের হয়। পথে দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে রুখিয়াকে চলন্ত অটোরিকশায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে অটোচালক রাজ খানের সহায়তায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে শালবনে লাশ ফেলে দেয় তারা।
রুখিয়ার মা সুমতি রাউত জানান, তার মেয়ে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গ্লোরি চেরিটেবল অর্গানাইজেশন নামে আদিবাসীদের অনাথ আশ্রমে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতেন। সোমবার রংপুর যাওয়ার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দরিদ্র পরিবারের প্রদীপটা নিভে গেল। আমি এই হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই।’
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, খুন-ধর্ষণ ও জমি দখলের কারণে আদিবাসীরা আতঙ্কিত। তিনি অবিলম্বে রুখিয়া হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রুখিয়কে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে আনিছুল। দিনাজপুরের পুলিশের এএসপি মিয়া মো. আশিস বিন হাসান বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহতের পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
Leave a Reply