বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জনগণ এখন এ সরকারের পতনের দিন গুনছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ি রাস্তার মোড়ে ফরিদপুর বিভাগীয় রোডমার্চের পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগ এ রোডমার্চের আয়োজন করে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতি এখন ক্রান্তিলগ্নে। হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। ৪০ লক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন অবৈধ সরকার জনগণের উপর চেপে বসেছে। এ অবৈধ সরকার এখন অবৈধভাবে কাজ করে চলেছে। তাই এ সরকারকে জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভয় নেত্রী যদি বাইরে থাকে তাহলে তাদের রেহাই নেই। এজন্য তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এখন হাটে মাঠে ঘাটে যেখানেই যাই সবাই জিজ্ঞেস করে- ‘আর কয়দিন’ এর মানে কী? মানে হলো এই সরকারের পতন হয় না কেন, এই সরকার আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবে? জনগণ এখন এই সরকারের পতনের দিন গুনছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যা দেখিয়েছে আমি এর নাম দিয়েছি ভোট চুরির প্রকল্প। নির্বাচনে জিততে এই ভোট চুরির প্রকল্পই তার একমাত্র ভরসা।
জাতিসংঘও বলছে- বাংলাদেশে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। অতএব তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিদেশিরা তো আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলবে না।
আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে আমির খসরু বলেন, এই ভিসানীতিতে তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। কার ভিসা ক্যান্সেল হয়, কার পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দেয় তারা এখন সেই চিন্তায় আছে।
ফরিদপুরের পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, এই সরকারের সময় আর বেশি নেই। দ্রুতই এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে সেলিমা রহমান বলেন, শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। এখন খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার জন্য বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।
বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেন, এ সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম এখন আকাশছোঁয়া। মানুষ এখন বিপদের মধ্যে রয়েছে। যত দ্রুত এ সরকার বিদায় নেবে ততই দেশের মঙ্গল।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, বর্তমান সরকারকে আর এদেশের মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা দীর্ঘ ১৫ বছর এদেশের মানুষের উপর স্টিমরোলার চালিয়েছে। দেশকে তারা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি দ্বার করিয়েছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বাংলার মানুষ ঘরে ফিরে যাবে না।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু বলেন, এই সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। এই সরকার হলো ভোট চোরের সরকার, এই সরকার হলো লুটেরাদের সরকার। এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন এদেশে হবে না।
পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ প্রমুখ।
এই পথসভায় অন্তত ১৫০টি পিকআপ, ১০০টি মাইক্রোবাস ও দুই শতাধিক মোটরসাইকেলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। পথসভা চলাকালে রাজবাড়ি রাস্তার মোড় এলাকায় গাড়ি চলাচল করে অত্যন্ত ধীরগতিতে। পথসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চের শুরু হয়। রাজবাড়ীর বসন্তপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে রোডমার্চের বহরটি দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুরের রাজবাড়ি রাস্তার মোড়ে এসে অতিথিদের বক্তব্যের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এরপর ওই একই মহাসড়ক ধরে মাদারীপুরের দিকে যায় রোডমার্চের বহর। পথে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বরইতলা মোড়ে পথসভা করে বিএনপি। সেখান থেকে মাদারীপুর জেলার মস্তফাপুর মোড়ে পথসভা শেষে মাদারীপুর শহর হয়ে শরীয়তপুর স্টেডিয়াম অভিমুখে যায় রোডমার্চের বহর। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রোডমার্চের বহর পৌঁছার পর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
Leave a Reply