জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে উপকূলবাসীর রক্ষাকবচ কক্সবাজার সৈকতের বালুচরের বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঝাউগাছ। গত সাত দিনে অন্তত এক হাজারের বেশি ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। এই ঝাউগাছ বন বিভাগের লোকজন কিছুটা সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ কেটে নিয়ে গেছে স্থানীয় গাছচোর সিন্ডিকেট। পাশাপাশি সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গেছে অনেক গাছ।
এ ছাড়া সারি সারিভাবে দীর্ঘ সৈকতে পড়ে আছেন হাজারও ঝাউগাছ। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, লাবণী, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, উখিয়ার ইনানী, সোনাপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং উপকূলের প্রায় ৪৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ১২ লাখ ঝাউগাছ সৃজন করা হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে আরো ১৮৫ হেক্টর বালুচরে সৃজন করা হয় ২ লাখের বেশি ঝাউগাছ। কিন্তু গত ১০ বছরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ভাঙনে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে ৮ লাখের বেশি ঝাউগাছ। ভাঙন রোধে সম্প্রতি সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতিরক্ষা বাঁধ (জিও টিউব) দিয়েও ঝাউগাছ রক্ষা করতে পারছে না।
ঢেউয়ের ধাক্কায় জিও টিউব বাঁধও ভেঙে পড়েছে। জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছ তলিয়ে যাচ্ছে। উপড়ে যাচ্ছে গাছের শিকড়।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, উপকূল ও সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার্তে দ্রুত সময়ে বাঁধ নির্মাণ করে সমাধান জরুরি। অন্যতায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঝাউগাছ বিলীনয়ের পাশাপাশি উপকূলবাসীও সাগরের করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাবে না।
কক্সবাজারের পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এর নির্বাহি পরিচালক ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ঝাউগাছ বিলীনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এই বিষয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন দফতর ঝাউবীতি রক্ষার্তে এগিয়ে আসেনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জানান, প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউ গাছের গোড়া থেকে বালি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউবাগান।
তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু জোয়ারের পানি বেড়ে ঢেউয়ের ধাক্কায় তার অর্ধেকের চেয়ে বেশি বিলীন হয়ে গেছে।
বন কর্মকর্তা আরও জানান, জরুরি প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বারা আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মানের জন্য জেলা প্রশাসককে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে।
বন কর্মকর্তা হুমায়ন বলেন, জনবল সল্পতার কারনে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ে যাওয়া ঝাউগাছ যথাসময়ে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে যারা রয়েছে তারা প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে চোরচক্র কিছু গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গত শনিবার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি যুগান্তরকে বলেন, সাগরের রাক্ষুসে গ্রাস থেকে উপকূল ও ঝাউগাছ রর্ক্ষাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মৌখিকভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে।
তারা ইতিপূর্বে লাবনী পয়েন্টে জিও টিউব দিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঝাউবীথি ও উপকূল রক্ষায় শক্ত এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে। পাশাপাশি যেন দ্রুত সামাধান আসে সেই বিষয়েও কাজ করে যাবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
Leave a Reply