সাদ্দাম হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অবস্থিত জিল বাংলা চিনিকল পূঞ্জিভূত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ধ্বংসের দ্বাড়প্রান্তে দাড়িয়েছে। দীর্ঘ দিনের বকেয়া ঋণের বোঝা মাথায় থাকায় নুয়ে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জের জিল বাংলা চিনি কল। স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা মিলের পূঞ্জিভূত বকেয়া ঋণের সুদ শ্রমিক কর্মচারীদের অন্তোষ,জোনের বিভিন্ন এলাকা প্রায় ২৫টি ইঞ্জিন চালিত ক্রাশার মেশিন ব্যবহারসহ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় দায়ী করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ময়দা, পচা চিটাগুড় ও নালী দিয়ে গুড় তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধিতে জামালপুরের একমাত্র চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। জানাগেছে, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে ৩৫১ একর জমির উপর মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চিনি কলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৫৯-৬০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মিলের প্রথম আখ মাড়াই শুরু করেন। চলতি বছর ২০২০-২১ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় ৭ হাজার আখ চাষী উৎপাদিত আখ নিয়ে ৬৩তম আখ মাড়াই শুরু হয়। ১৯৫৯-৬০ থেকে ৬২ তম আখ মাড়াই মৌসুম অতিক্রমকালে ৪৪টিতে লোকসান ১৮টি লাভ করেছে। মিলের এই ৬২তম আখ মাড়াই বড় অংশটাই লোকসান দিতে হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থ বছরে ২০১৯-২০ আখ
মাড়াই মৌসুমে ৬ কোটি টাকা মূল্য ১ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মূল্য ৭ মেট্রিক টন চিটা গুড় অবিক্রিত রয়েছে। শ্রমিক কর্মকর্তা
কর্মচারী অনুমোদিত ৯৮৯ জনের মধ্যে কর্মরত ৬৩৭ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকী ৩৫২টি পদ দীর্ঘ দিন যাবত শূন্য হলেও ২০২০ শ্রমিকদের ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে । ২০২০-২১ আখ মাড়াই ৯৫ দিন ধার্য্য করা হলেও বিগত বন্যার কারণে চরাঞ্চলের আখের ব্যাপক ক্ষতির ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মিল বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মিল কৃষি ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জানান,আপাতত সরকারের দেওয়ানগঞ্জ সুপার মিল বন্ধ করে দেওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আখ মাড়াই ব্যাংক সুদসহ চিনির মূল্য ১শত ৮০টাকা পড়লেও চিনি বিক্রি হয়েছে ৬০টাকা। বিভিন্ন রাসায়নিক সংস্থা থেকে বীজ সার কিটনাশক প্রায় ২ কোটি ৪৮ লক্ষ ও বিসিআইসি ৫৬ কোটি টাকা মিলের নিকট প্রাপ্ত রয়েছে। এই পূজিভুতব্যাংক ঋনের টাকা সুদ দিতে গিয়ে মিলের দীর্ঘ দিনের লোকসান টানতে হচ্ছে। গত বছর আখ মাড়াই অবিক্রীত চিনি ৬৫৬ মেঃটন এবং ২০-২১ ১হাজার ২০মেঃটন উৎপাদন হয়েছে। ৪শত ২৬ কোটি টাকা পূজিভূত মিলের ঋন ৬২তম পর্যন্ত থাকায় মিলের লোকসান হওয়ার বড় কারণ। আখ চাষী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক আঃ মান্নান মোল্লা জানান- প্রতি বছর পূঞ্জি সংকট প্রকৃত চাষীদের লোন না দেওয়ায় চাষীদের ও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জিল বাংলা চিনি কলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চাষীরা জানান- মিলটিতে প্রতি বছরের লোকসানের দায় মুক্ত করে লাভজনক পর্যায়ে নিতে মিলে পুঞ্জিভূত বকেয়া ঋণের সুদ মওকুফ করাসহ পুরাতন আমলে পুরাতন পদ্ধতির উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন করে মাড়াই ক্ষমতা দ্বিগুণ করতে হবে।
চাষীদের ন্যায্য মূল্য সঠিক সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে চিনি শিল্প ধ্বংসকারী শ্যালো ইঞ্চিন চালিত গুড় তৈরীর সরঞ্জাম ক্র্যাশার মেশিন বন্ধ
করতে হবে। ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক জানান, আখ চাষীদের উৎসাহিত করণ, সার বীজ, যথা সময়ের মধ্যে আখের টাকা পরিশোধ, চাষীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, প্রান্তিক চাষীদের প্রতিমাসে আখ চাষের উদ্বৃদ্ধকরণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ,কৃষকরা যেন হয়রানির স্বীকার না হয় সেদিকে কর্র্তৃপক্ষের খেয়াল রাখা সহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
Leave a Reply