সাদ্দাম হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি: প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সরকারি নানা সুবিধা ভোগ করছেন শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালক) জামালপুর শাখার এডুকেটর মুহাম্মদ নুরুজ্জামান।
শারীরিকভাবে সক্ষম একজন সরকারি কর্মচারী প্রতিবন্ধীর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কী করে এমন কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মুহাম্মদ নুরুজ্জামান টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার ঘোনারচালা গ্রামের
মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি সখিপুর উপজেলার কালিয়ায় জন্মগ্রহন করেন ১৯৭৫ সালের ২২ ডিসেম্বর । একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ব্যবসা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সমাজ সেবা অধিদফতরের আওতায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে তিনি এডুকেটর পদে যোগদান করেন
২০১৫ সালের ১২ জুলাই। প্রথমে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে যোগদান করলেও পরে বদলি হয়ে জামালপুর আসেন। সরকারি চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক প্রতিবন্ধীর পরিচয়পত্র ইস্যু হয় টাঙ্গাইল জেলার
সখীপুর উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে।
শারিরীকভাবে সক্ষম নুরুজ্জামান একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও নিজেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী দেখিয়ে প্রতিবন্ধী তালিকায় নাম অন্তভুক্ত করেন। তবে প্রতিবন্ধীদের যে ভাতা রয়েছে তা তিনি কখনো উত্তোলন করেন না বলে
জানিয়েছেন।
জেলার মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, “একজন প্রতিবন্ধী কিভাবে এডুকেটর পদে কর্মরত আছেন? তিনি যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এইপদের জন্য যোগ্য নয় বলে আমি মনে করি। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক এবং চাকরিবিধি
পরিপন্থী। তিনি চাকরিতে যোগদানের পূর্বে বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তিনি ভাতা উত্তোলন করেন না, তাহলে কেনো তার পরিচয়পত্র প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দফতরকে এই ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। ” টাঙ্গাইল জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম মোবাইল ফোনে জানান, “এই বিষয়টি খুবই জটিল। তিনি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছেন। কিন্তু ভাতা উত্তোলন করেন না। তবে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। একটি দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ভেঙে গেলেও হাতটি অচল না। আসলে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী কিনা এ বিষয়টিও আমরা এখনো পরিষ্কার নই। ”
এ বিষয়ে মো. নুরুজ্জামান বলেন “২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বাড়িতে বড়ই গাছ থেকে পড়ে আমার বাম হাত ভেঙে যায়। তাই আমি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছি কিন্তু কোনো দিন ভাতা উত্তোলন করিনি। আর ভবিষ্যতেও উত্তোলন করবো না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহকর্মীরা জানান, “ তার শরীরে প্রতিবন্ধীর কোনো লক্ষণই আমরা দেখিনি। কখনো জানতামও না যে তার প্রতিবন্ধী কার্ড রয়েছে।” শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালক) জামালপুর শাখার উপপ্রকল্প পরিচালক সুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের এ জায়গায় এখনো কয়েকজন প্রতিবন্ধী চাকরি করছেন তাই মুহাম্মদ নুরুজ্জামানও এডুকেটর পদে চাকরি করতে পারেন। আর তিনি প্রতিবন্ধী হিসেবে কোনো ভাতা উত্তোলন করেন না এবং আমার এই জায়গা থেকে কোনো সুবিধা ভোগ করেন না।”
Leave a Reply