করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের চিন্তাশীল, সমন্বিত পরীক্ষা নীতি প্রয়োজন। এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাইকেল এস ফ্রিডম্যান এ মন্তব্য করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশে মহামারির প্রকৃত অবস্থা জানতে এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ পিসিআর পরীক্ষা সময় সাপেক্ষ এবং সব সময় যথার্থ নয়।
সম্প্রতি ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে দেওয়া ওই সাক্ষাতকারে ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা পূর্ণাঙ্গ নয়। বাংলাদেশে কি হচ্ছে, তা জানতে আমাদের একটি পরীক্ষা কৌশল জরুরি। তার মতে, এন্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত ফল জানা সম্ভব হয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রামীণ এলাকায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। একইসঙ্গে এন্টিবডি পরীক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। এন্টিজেন পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা এবং এন্টিবডি পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা খুবই দুঃখজনক। সিডিসি এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, এন্টিবডি পরীক্ষা মহামারির প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এখনো শুরু হয়নি। হাসপাতালগুলোতে টেস্টিং কৌশল প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে করোনা মহামারি প্রসঙ্গে সিডিসি ডিরেক্টর বলেন, কোভিড সংকটের শুরু থেকেই সিডিসি কাজ করছে। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা নতুন এই মহামারির বিষয়ে বিস্তারিত জানার ওপর জোর দিয়েছি। ভাইরাসটির বিষয়ে জানার পাশাপাশি সরকারের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। একইসঙ্গে কিভাবে এই মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি কি কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি।
মহামারির প্রথমদিকের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে আমরা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছি। এই ভাইরাস বিকশিত হচ্ছে। আমরা অতীতে যে পরামর্শ দিয়েছি তার থেকে এখনের পরামর্শ ভিন্ন হতে পারে। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, ঢাকার মেয়র, ব্যবসায়ী নেতা, সামরিক স্বাস্থ্য সেবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছি। একইসঙ্গে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কারিগরি সহায়তা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এই সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই সংকট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সামর্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল মূল্যায়ন করে সিডিসির ডিরেক্টর বলেন, শুরুতেই লকডাউন বা সাধারণ ছুটির মতো পদক্ষেপ ভাইরাসের কমাতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করি। যদিও এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিলো না। তবে ভাইরাসের বিস্তার একবারেই ঠেকানো যাবে এটাও বাস্তবসম্মত নয়। যেটা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশেও সম্ভব হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূর্ব অভিজ্ঞতা খুব কমই ছিলো।
তিনি বলেন, গত চার-পাঁচ মাস ধরে এই ভাইরাসের বিস্তার হয়েছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে কোনো আকস্মিক ‘পিক’ দেখিনি। ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার রুখে দিতে বাংলাদেশ সফল হলেও তা থামাতে সমর্থ হয়নি।
মাইকেল ফ্রিডম্যান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, করোনা নিয়ে সরকারের তথ্য-উপাত্তে আমরা বিশ্বাস করি। সরকার সঠিক তথ্য পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের কাছেই পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আরো বেশি হাসপাতাল, দক্ষ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরীক্ষাগার তৈরি করতে হবে।
মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ডা. মাইকেল ফ্রিডম্যান জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অভিজ্ঞ। ২৭ বছর ধরে চারটি মহাদেশে জনস্বাস্থ্য ও ইন্টারনাল মেডিসিনে কাজ করেছেন। গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশে সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছেন। সিডিসি বাংলাদেশে প্রায় ৪০ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে। আইসিডিডিআরবি, আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের দক্ষতা উন্নয়নে কারিগরি সহায়তায় সিডিসি কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
Leave a Reply