করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির নবম সভা শেষে থেকে বুধবার এই জোরালো সুপারিশ আসে।
সভায় হাসপাতালের সেবার পরিধি বাড়ানোসহ পাঁচটি সুপারিশ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ১৭ সদস্যের এই কমিটি।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ নিশ্চিত করতে ‘পূর্ণ লকডাউন’ প্রয়োজন।
“কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবন এবং জীবিকার সামঞ্জস্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সারা দেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব জরুরিভাবে লকডাউনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করে।”
এর আগে অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে সব হাসপাতালে হাই-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে তা চালু করার পরামর্শ দিয়েছিল কমিটি।
এবারের বৈঠকেও কমিটি হাই-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি সব হাসপাতালে চালু ও সম্প্রসারণ করার পরামর্শ দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা ব্যাপকহারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে কমিটির সভায়।
চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কার কথাও বলেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দ্রুত আলাদা হাসপাতাল চালুর পরামর্শ এসেছে সভা থেকে।
এর আগে সব হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের আলাদা চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল জাতীয় কমিটি।
যেসব হাসপাতালে সে সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেখানে তা কার্যকর করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে সভায়।
“পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আরও বাড়ানো দরকার। এজন্য বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা এ রকম অন্য যে কোনো উপযুক্ত হাসপাতাল আশু চালু করা দরকার।”
কমিটি বলেছে, পরীক্ষার মান্নোয়ন ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যতদিন সময় কমানো সম্ভব না হয়, পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে সন্দেহজনক রোগীর চিকিৎসা বা আইসোলেশন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু পর সারা দেশে ২৬ মার্চ থেকে অফিস আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে শুরু হয় লকডাউনের বিধিনিষেধে।
কয়েক ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করার পর ৩১ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছুই ‘সীমিত’ আকারে খুলে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং দূরত্ব রাখার নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়।
বিধিনিষেধ শিথিলের পর যখন আবার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে কাজে ফেরা শুরু করলে, তখনও দেশে সংক্রমণ আর মৃত্যু বাড়ছিল প্রতিদিন।
অন্য অনেক দেশে যেখানে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করার পর লকডাউন তোলা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে মহামারীর ওই অবস্থায় যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কমিটির কয়েকজন সদস্যও প্রশ্ন তোলেন।
এরপর ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি হিসাবে, দেশে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন ১ হাজার ১২ জন।
Leave a Reply