ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সাত নম্বর জনকল্যাণ মার্গের সুবিশাল বাংলোর প্রশস্ত বাগানে হেঁটে যাচ্ছেন, ময়ূর পেখম তুলে তার আশপাশে নেচে বেড়াচ্ছে।
ওই একই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে তার বাসভবনে ময়ূর ও ময়ূরীদের নিজের হাতে খাওয়াচ্ছেন মোদি। বাড়িতে ময়ূরকে খাইয়ে প্রধানমন্ত্রী আইন ভেঙেছেন কিনা সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
রোববার বিকালের দিকে ওই ভিডিওটি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গে কয়েক চরণ কবিতাও।
সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। অন্যতম বিরোধী দল আরজেডির নেতা শ্যাম রজক বলেন, বছর তিনেক আগে যখন লালুপ্রসাদজির বাংলোতে দুটো ময়ূর ছাড়া হয়েছিল, তখন কিন্তু এই বিজেপিই বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছিল।
১৯৭২ সালে দেশের পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই আইন অনুসারে ময়ূর একটি বিপন্ন প্রাণী এবং বাড়িতে ময়ূর পোষা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এখন দেশের আইন তো প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে লালুপ্রসাদ যাদব- সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত!
আরজেডির এমপি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোজ ঝা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ময়ূরদের সঙ্গে যে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন, সেটি ‘নান্দনিকভাবে খুব কুরুচিপূর্ণ’!
তার যুক্তি হলো– আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুব সঙ্গীন। রোজ প্রায় ৭০ হাজার নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছেন হাজারখানেক। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এ ধরনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারেন?
এটি তো রোমের মানুষের দুর্দশা দেখে রোমান সম্রাটদের হাসিঠাট্টা করার মতোই ব্যাপার।
বিহারে নির্বাচন আসন্ন, ওই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি স্পষ্টতই এই ময়ূরকে খাওয়ানোর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকে এখন বিপাকে ফেলতে চাইছে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাটনায় লালুপ্রসাদ যাদবের বাংলোতে দুটো ময়ূর ছাড়ার ঘটনা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। শোনা যায়, কোনো এক ধর্মগুরু লালুপ্রসাদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বাড়িতে ময়ূর রাখলে ভাগ্য ফিরবে।
লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ তখন রাজ্যের বন ও পরিবেশমন্ত্রী। তার উদ্যোগেই এর পর দুটি ময়ূর এনে লালুপ্রসাদ যাদবের ১০ নম্বর সার্কুলার রোডের বাংলোতে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিজেপি এ নিয়ে তুমুল হইচই শুরু করলে দুদিন পরেই ময়ূর দুটিকে বাংলো থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। লালুপ্রসাদ তখন দাবি করেন, এগুলো নিজে থেকেই অন্যত্র উড়ে গেছে।
এখন প্রধানমন্ত্রী মোদির ময়ূরকে খাওয়ানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর বিজেপি অবশ্য বলার চেষ্টা করছে, দুটো ঘটনার মধ্যে কোনো মিল নেই।
বিহার বিজেপির প্রধান মুখপাত্র রজনী রঞ্জন প্যাটেলের কথায়, লালুপ্রসাদ তার বাংলোতে ময়ূরকে খাঁচাবন্দি করতে চেয়েছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সুপ্রশস্ত বাগানে ময়ূররা নিজে থেকেই আসে, অবাধে ঘুরে বেড়ায়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন বলে ময়ূররা তার কাছে আসতে ভালোবাসে। এখানে ময়ূর পোষার বা আইন ভাঙার কোনো প্রশ্নই ওঠে না!
Leave a Reply