গাজায় যুদ্ধবিরতির নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার প্রায় ঘণ্টা খানিক সময় আগেই হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইল। হামলা শুরুর পরবর্তী দুই ঘণ্টায় গাজাজুড়ে বিভিন্ন অবস্থানে অন্তত ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে জাবালিয়া ও গাজা সিটিতে ৭ জন, খান ইউনিসে ও রাফাহে ১২ জন এবং অবরুদ্ধ গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত আল-মাগাজি এলাকায় ইসরাইলি হামলায় আরও ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে, যুদ্ধবিরতির নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই গাজায় আবারও বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরাইলের অভিযোগ, হামাসের পক্ষ থেকেই প্রথম ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়টিকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার ঘণ্টাখানেক আগেই হামাস ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায়।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে রকেট হামলা চালিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
আইডিএফ এমন অভিযোগ তুললেও হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগের বিপরীতে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে গাজায় ইসরাইলি হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের একাধিক সংবাদমাধ্যম। সেগুলোর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার আগেই ইসরাইলের বিমান ও গোলন্দাজ বাহিনী গাজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও নতুন করে হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মিসর সীমান্তের কাছাকাছি রাফাহ অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও স্থিরচিত্র থেকে দেখা গেছে, গাজার অন্যতম শরণার্থীশিবির জাবালিয়া থেকেও কালো ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ উঠছে।
এদিকে, নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন জানিয়েছেন, বেসামরিক প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় সম্মত হয়েছে ইসরাইল। তিনি দেশটি সফরকালে ইসরইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজা সংকট শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইসরাইল সফর করলেন ব্লিংকেন।
ব্লিংকেন বলেছেন, তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন- দক্ষিণ গাজায় এমন কোনো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি করা যাবে না, যাতে করে বেসামরিক মানুষের প্রাণ ও সম্পদহানি হয় এবং বাস্তুচ্যুত হতে হয়ে উত্তরে পালিয়ে যেতে হয়।
ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘আমরা ইসরাইলের চলমান পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি এবং আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে জোর দিয়ে বলেছি, বেসামরিক জীবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও উত্তর গাজায় যে পরিমাণ বাস্তুচ্যুতি আমরা দেখেছি, তা যেন দক্ষিণে পুনরাবৃত্তি করা না হয়।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এবং ইসরাইল সরকার সেই পদ্ধতির সঙ্গে একমত হয়েছে। হাসপাতাল, পানি পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ক্ষতি এড়াতে এবং পরিষ্কারভাবে নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ করার জন্য দৃঢ় ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ইসরাইল এ বিষয়েও একমত হয়েছে।’
Leave a Reply