সিলেটে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদকে (৩৪) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া এএসআই আশেক এলাহীর ৫ দিনের ও একই ঘটনায় ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়া বরখাস্ত পুলিশ কনস্টেবল হারুনুর রশীদকে দ্বিতীয় দফায় ৩ দিনের রিমান্ড রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম জানান, আদালতে তোলে আশেক এলাহীর ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বরখাস্ত কনস্টেবল হারুনুর রশীদকেও বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে তোলা হয়। আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় তার আরও ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বিকাল ৩টায় কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের আদালতে হাজির করে পিবিআই। আর বুধবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) হেফাজত থেকে গ্রেফতার করা হয় এএসআই আশেক এলাহীকে। নির্যাতনের ঘটনার পরপরই ফাঁড়ি থেকে তাকে প্রত্যাহার করে নজরবন্দি রাখা হয়েছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এএসআই আশেক এলাহী গত ১০ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে যান। ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান নিহত হন। পরবর্তীতে এসএমপির তদন্তে আশেককে বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
এ নিয়ে রায়হান হত্যা মামলায় মোট গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজন পুলিশ সদস্যকে। এর মধ্যে দুজন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। ৮ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার টিটুকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ছিনতাইয়ের অভিযোগ তোলা সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পিবিআই জানায়, কথিত ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে এনেছিলেন এএসআই আশেক এলাহি। এ বিষয়টি ঘটনার রাতে ফাঁড়িতে থাকা তিনজন কনস্টেবল আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন। রায়হানকে তুলে এনে ফাঁড়িতে নির্যাতন করার সময় আশেক সেখানে ছিলেন এবং রায়হানকে তুলে আনার সময়ও ছিলেন তিনি।
সিলেট নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পর দিন রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে এসএমপির একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর আকবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে গা-ঢাকা দেয়।
এসএমপি সূত্র জানায়, আকবরের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশের সদর দফতরের তিন সদস্যের একটি কমিটি। আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ফাঁড়ির ‘টুআইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিনকে ২১ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আকবরের পলায়নে সমালোচনার মুখে বদলি করা হয় এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে। তার জায়গায় পুলিশের স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি পদে থাকা মো. নিশারুল আরিফকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে তিনি এসএমপি কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
Leave a Reply