চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় রিমান্ডে থাকা এক আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম আফসার আলী (৩৫)। এই মৃত্যু নিয়ে পরিবার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তিন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
পরিবারের দাবি, থানা হেফাজতে রিমান্ডে থাকাবস্থায় হত্যা করা হয়েছে আফসারকে। তবে পুলিশ সুপার বলছেন আফসার আলী গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আর ওসি বলছেন এটি স্বাভাবিক মৃত্যু।
আফসার আলী পৌর এলাকার টিকরামপুর মধ্যপাড়ার মহসীন আলীর ছেলে।
গত রোববার সদর উপজেলার সুন্দরপুর বাগডাঙ্গা শুকনাপাড়া এলাকা থেকে ১ কেজি ১৯৫ গ্রাম হোরাইনসহ আফসার আলীকে আটক করে র্যা ব। সদর থানার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, অভাবের কারণে মনোমালিন্য চলছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। কয়েক দিন অভুক্ত থাকায় শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হন তার স্বামী। তার পর আর বাড়ি ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে মেলেনি কোনো হদিস। পরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে জানতে পারি থানায় আটক আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অভাব-অনটনের সুযোগে সোর্স ওয়াসিম আর মোহন তার স্বামীকে কৌশলে মাদক ধরিয়ে দেয়। পরে র্যা বের হাতে ধরা পড়ে। সোমবার থানায় দেখা করতে গেলে শিশুসন্তানদের সামনেই হাতকড়া পরা অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। তিনি দাবি করেন পুলিশ রিমান্ডে এনে তার স্বামীকে হত্যা করেছে।
পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সঠিক নয়। আমাদের সিসি ক্যামেরার ফুটে আছে আপনারা দেখতে পাবেন।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান যুগান্তরকে জানান, থানা হাজতের বারান্দায় স্ট্যান্ড ফ্যান ছিল। সেটির তার ছিঁড়ে বাথরুমে গিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের সঙ্গে ঝুলে আফসার আলী আত্মহত্যা করেছেন।
সিসি ক্যামেরার মনিটরে দেখতে পেয়ে ডিউটি অফিসার তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং ঘটনাস্থল দেখতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রুহানী আখতার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান।
গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এমন তো না, এ ব্যাপারে আমি জ্ঞাত না। বুকের ব্যথাজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈদুল ইসলাম জানান, আফসার আলী নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। রিকশাভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার কোনো কারণ দেখছি না। সকালে তো তার স্ত্রী ভালো অবস্থায় দেখে এসেছে।
তা ছাড়া থানা হেফাজতে কীভাবে ফাঁসি দিল বা ফাঁসি দেয়ার পজিশন কোথায় পেল? সেটিই এখন ভাববার বিষয়। আফসার গ্রেফতার হয়েছে সেটিও আমি জানতাম না। রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
Leave a Reply