এদিন ভোরে ধানমণ্ডির সোবহানবাগ থেকে গ্রেপ্তার করার পর সোয়াদকে দুপুরে ঢাকার বিচারকি হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন নৌপুলিশের এস আই মো. শহীদুল ইসলাম।
অন্যদিকে সোয়াদের পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাভাপতি ইকবাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন আলী খান হাসান রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এ আদালতের অরিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আনোয়ারুল কবীর বাবুল রিমান্ড শুনানিতে বলেন, “অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে ঠাণ্ডা মাথায় আসামির তাদের লঞ্চটি দিয়ে অন্য লঞ্চকে পিষে দেয়। এটি নিছক দুঘটনা নয়, বরং হত্যাকাণ্ড।”
এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সোয়াদের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, “ওই দুর্ঘটনায় তার কোনো দায় নেই। লঞ্চের ফিটনেনে সমস্যা ছিল না। তাছাড়া মামলার ধারা জামিনযোগ্য। যারা লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন এবং চালাতে সহযোগিতা করছিলেন, তারা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।”
শুনানি শেষে বিচারক আসামি সোয়াদের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাকে ৩ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
গত ২৯ জুন ঢাকা সদরঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে আসা মর্নিং বার্ড নামে একটি ছোট লঞ্চ ডুবে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নৌ-পুলিশে এসআই শামছুল আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার, মাস্টার জাকির হোসেন, স্টাফ শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, হৃদয় ও সুকানি নাসির মৃধার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
প্রাণহানির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৩৩৭ ও ৩৪ ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।
ওই ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার নয়টি কারণ চিহ্নিত করে বলা হয়, ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কাতেই মর্নিং বার্ড ডুবে প্রাণহানি ঘটে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিশ দাফ সুপারিশও দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
দুর্ঘটনার পর সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘটনার যে ধরন, তাতে তার মনে হয়েছে এটা ‘পরিকল্পিত এবং হত্যাকাণ্ড।’
গত ৭ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম এটি হত্যাকাণ্ড এবং এখনও দেখলে আবারও বলব হত্যাকাণ্ড। যেহেতু অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে, তদন্তে যদি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই ৩০২ ধারায় (হত্যা মামলা) আসবে।”
Leave a Reply