প্রদীপ ও লিয়াকতের সঙ্গে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে এসআই দুলাল রক্ষিতকে। এ মামলায় আত্মসমর্পণ করা বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়াকে দুই দিন জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন বিচারক।
মামলার বাকি দুই আসামি এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা এখনও পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে আদালত।
টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌমের দায়ের করা এই হত্যা মামলায় লিয়াকতকে ১ নম্বর এবং প্রদীপকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
শারমিন বুধবার সকালে টেকনাফের বিচারিক হাকিম আদালতে মোট ৯ জনকে আসামি করে ওই মামলা করার পর বিকালে টেকনাফ থানা থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করা হয়। পরিদর্শক লিয়াকত আলিসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয় দুদিন আগেই।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ বুধবার হত্যা মামলাটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার তদন্তভার দেন র্যাবকে।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় টেকনাফ থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বিএম মাসুদ হোসেন জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর আসে, পরিদর্শক প্রদীপকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ। এরপর তাকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কয়েকটি গাড়ি।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রামের দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে এসেছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। তাকে এখন পুলিশ হেফাজতে কক্সবাজারে নেওয়া হচ্ছে। তিনি যেহেতু মামলার আসমি, তিনি সেখানে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।”
চট্টগ্রাম থেকে পরিদর্শক প্রদীপকে নিয়ে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে কক্সবাজারের বিচারিক হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। কক্সবাজারে পুলিশ হেফাজতে থাকা পরিদর্শক লিয়াকতসহ বাকি ছয়জনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় তার আগেই।
এ সময় পুরো আদালত এলাকায় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন।
মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক হেলাল উদ্দিন তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কিন্তু তাদের কারাগারে নেওয়ার আগেই আদালতে হাজির হয় এ মামলার তদন্তভার পাওয়া সংস্থা র্যাবের একটি দল।
সিনহা হত্যা মামলায় ওই সাত আসামিকে দশ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
শুনানি শেষে বিচারক তিনজনকে রিমান্ডে পাঠিয়ে বাকি চারজনকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। পাশাপাশি পলাতক দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন তিনি।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আসামিদের কারাগার থেকে কক্সবাজারে র্যাব-১৫ কার্যালয়ে নিয়ে যাব এবং সেখানে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করব, ঢাকায় আনার প্রয়োজন নেই।”
ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ‘বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যার’ যেসব অভিযোগ এসেছে, সেসব বিষয় র্যাব দেখবে কি না জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, “যে হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব র্যাব পেয়েছে, সেটাই দেখা হবে।”
র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার জামিউল হক এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন।
Leave a Reply