সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত আকারে ট্রেন চালুর এক মাস পরেও ধারণ ক্ষমতার ৭০ শতাংশ আসন ফাঁকা যাচ্ছে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের ফাঁকা আসনের সংখ্যাও বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি যাত্রী রেলে চলাচল করলেও বর্তমানে সেই যাত্রীর সংখ্যা নেমেছে গড়ে ১৭ হাজারে।
বর্তমানে ১৭ জোড়া ট্রেন অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলাচল করছে। যে সব আসনে যাত্রী বসার কথা তার প্রায় ৪০ শতাংশ ফাঁকা থাকছে। সেই হিসাবে বেশিরভাগ ট্রেন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার ৭০ শতাংশ আসন ফাঁকা নিয়েই গন্তব্য যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা এখন বাদ দিতে হচ্ছে বলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলে যাত্রী ক্রমাগত কমছে। জুলাই মাসে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকলেও তা আর সম্ভব হচ্ছে না।”
যাত্রী কমার কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রীও।
মহামারীর সময়ে রেলওয়ের ‘৩০০ কোটি’ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
যাত্রীশূন্য রেল চলাচলে লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হতে থাকবে জানিয়ে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টারে টিকেট বিক্রি, কমিউটার ট্রেন চালু এবং বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্ধ স্টেশন চালু করলে যাত্রী বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, “রেলের লোকসান কমাতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া এখন সম্ভব নয়। বর্তমানে যেভাবে রেল চলছে সেভাবেই চলাচল অব্যাহত থাকবে।”
ঈদের আগে নতুন ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আপাতত নেই বলেও জানান রেলমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসের বেশি সময় দেশে সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে আট জোড়া এবং ৩ জুন আরও ১১ জোড়া ট্রেন নামানো হয়। ১৭ দিনের মাথায় যাত্রী সংকটে দুটি রুটে ট্রেন সাময়িক স্থগিত করে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে ১৭ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেন চলাচলের শুরুতে শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও এখন তেমন সাড়া নেই। কিছু কিছু দিন কোনো কোনো রুটে যাত্রী পরিপূর্ণ হচ্ছে আবার ফাঁকাও যাচ্ছে।”
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৫০ শতাংশ সিট বাদ দিয়ে এসব ট্রেনে আসন সংখ্যা ২৩ হাজার ৫০০ এর মতো। লকডাউনের পর শুরুতে এসব ট্রেনের ওই আসনগুলোতে যাত্রী ভর্তি হয়ে গেলেও এখন তা হচ্ছে না।
“গত ১৫ দিনের হিসাবে গড়ে এসব টিকেট ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে, বাকি সিট ফাঁকা থাকছে।”
রেলওয়ের ৩৬২টি ট্রেনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং বাকি ২৬০টির মতো লোকাল, কমিউটার ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে বলে জানান মিয়া জাহান।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে দুই লাখের বেশি যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন নাগাদ রেলে ৯ কোটি ২৭ হাজার যাত্রী চলাচল করেছে। প্রতি মাসে গড়ে ৭৫ লাখের বেশি যাত্রী রেল ভ্রমণ করছিল স্বাভাবিক সময়ে।”
যাত্রী কমতে থাকায় গত ২০ জুন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের আন্তঃনগর ‘সোনার বাংলা’ এবং ঢাকা-নোয়াখালী পথের ‘উপকূল এক্সপ্রেস’র চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
যাত্রী কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মিয়া জাহান বলেন, “আমরাই যাত্রীদের বলছি, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রেল ভ্রমণ না করাই ভালো। বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রী কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।”
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাসের যত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশ ঘটেছে গত জুন মাসে। ১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৭২০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা মোট আক্রান্তের ৬৬ দশমিক ৮১ ভাগ।
জুনে ট্রেন চালুর শুরুতে ট্রেন যাত্রীতে ভরে যাবে এ চিন্তা থেকে যাত্রীর চাপ সামলাতে নানা বিধি-নিষেধ এবং সতর্কতা নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এক মাস পর দেখা যাচ্ছে, নানা পদক্ষেপ নিলেও আতঙ্কেই রয়েছেন যাত্রীরা।
পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বর্তমানে চট্রগ্রাম-ঢাকা রুটে সুবর্ণ, চট্রগ্রাম- চাঁদপুর রুটে মেঘনা এবং চট্রগ্রাম-সিলেট রুটে উদয়ন এক্সপ্রেস চলাচল করছে। স্বাভাবিক সময়ে এ রুটে ১১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে এবং লোকাল ট্রেন রয়েছে ১৩ জোড়া।
“৫০ শতাংশ আসন বাদ দিয়ে সুবর্ণের আসন সংখ্যা ৪৫৪, মেঘনার ৪৭৪ এবং উদয়নে ৩১৮টি আসন থাকলেও গত ১৫ দিনে ৩০ শতাংশ আসনই ফাঁকা গেছে। বর্তমানে চট্র্রগ্রাম স্টেশনে যাত্রীর চাপ নেই।”
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ভুঁঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ অঞ্চলে স্বাভাবিক সময়ে ২২ জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে ১০ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ সিট বাদ দিয়ে এসব ট্রেনে সাড়ে চার হাজার সিট রয়েছে। গত ১৫ দিনের হিসাবে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়েছে, বাকি আসনগুলো ফাঁকা যাচ্ছে।”
Leave a Reply