দিনটি ছিল রোজ শনিবার ১৭ মে ১৯৮১ ইং। সকাল থেকেই মেঘাছন্ন আবহাওয়া ও ঝড়বৃষ্টি। তারই মধ্যে রয়েছে স্বৈরাচার মেজর জিয়ার পুলিশি বাধা। ঝড়বৃষ্টি আর স্বৈরতান্ত্রিকতার এ কালো ছায়া সেদিন লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী নেতা কর্মীদের মিছিল গতিরোধ করতে পারেনি। ভোররাতে নেতা কর্মীরা ছুটে গিয়েছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে। সবারই অপেক্ষা কখন আসবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।অপেক্ষার প্রহর প্রেরিয়ে বিকাল ৪ টা ২০ মিনিটে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে ও বাঙালির জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের সদন নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশর মাটিতে আলো হয়ে ফিরে আসলেন বাংলার মা,মাটি ও মানুষের নেত্রী আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়ক পর্যন্ত রাস্তাগুলো রুপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে। সেদিন প্রায় ১৮ লক্ষ নেতা কর্মী প্রিয় নেত্রীকে বরন করে নিতে এক কাতারে সামিল হয়েছিল। তখন স্বাধীনতার অমর স্লোগান ” জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ” ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস। লাখো জনতার কন্ঠে বজ্রধ্বনি ঘোষিত হয়েছিল ‘ পিতৃহত্যার বদলা নিতে / লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই। বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি ৩২নং পর্যন্ত মানবঢাল তৈরি করে প্রিয় নেত্রীকে সাদরে গ্রহণ করেছিল নেতা কর্মীরা। পিতার গড়া স্বাধীন দেশে আসার পর তার পৈত্রিক বাড়ি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় প্রবেশ করতে দেয়নি স্বৈরশাসক মেজর জিয়া। দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করেও বাড়িতে প্রবেশ না করতে পেরে। প্রিয় নেত্রী ফিরে যান সুধাসদনে। তারপর স্বৈরশাসক মেজর জিয়া প্রিয় নেত্রীকে পদে পদে সকল কার্যক্রমকে বাধা দিতে থাকে। তখন দূরদিনে প্রিয় নেত্রীর একমাত্র সম্বল ছিল দলের নিবেদিত নেতা কর্মীরা। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১৭ মে ১৯৮১ সালের) আগে ৫ মে বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা ‘নিউজউইক’ এ সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি আছে আছে তা জেনেও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সামরিক শাসন জারি থাকা অবস্থায় একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধ গিয়েছিলেন। তখন প্রিয় নেত্রী বলেন, ‘ আমি সামরিক শাসন মানি না, মানবো না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো। তাই তো কবি ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে লিখেছেন ” আপনিই তো বাংলাদেশ “। এক দিকে সামরিক স্বৈরশাসক সরকারের মৃত্যুর হুমকি অন্য দিকে মৌলবাদী জামায়াত গোষ্ঠীর দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র। তবে এ ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে বিরামহীন বিস্ময়কর ছুটে চলার নামই শেখ হাসিনা।
Leave a Reply